হযরত শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছে দেহলবী (রহঃ) জীবনী।। ওলীদের জীবনী।। taqwa-dawah

 হযরত শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছে দেহলবী (রহঃ)


(১৭৪৬ ইং ১৮২৪ ইং)


জন্ম ও বাল্যকাল: শাহ আব্দুল আযীয ছিলেন শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলবী (রহঃ)-এর পুত্র। ২৫ রমযান ১১৫৭ হিঃ/ ১১ অক্টোবর ১৭৪৬ সনে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালেই কুরআন মাজীদ হিফজ করেন, তাজ্বীদ ও কিরাআত শিক্ষা করেন। এগার বৎসরে বয়সে তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়। তাঁর পিতা স্বীয় খলীফাদের মধ্যে একজন যোগ্য ব্যক্তিকে তাঁর শিক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত করেন। মাত্র দুই বৎসরেই তিনি আরবী ভাষায় এবং বিভিন্ন বিষয়ে বিস্ময়কর দক্ষতা অর্জন করেন। তাঁর স্বাভাবিক উদ্যম ও মেধার নজীর বিরল।


অতঃপর পিতার দরসে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এই দরসে শুধু আলিম সমাজে খ্যাত অসাধারণ স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন ছাত্ররা অংশ গ্রহণ করতেন। ষোল বৎসর বয়সে তিনি তাফসীর, হাদীস, আকায়েদ, ফিকাহ, উসূল, মানতেক, জ্যামিতি, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, ইতিহাস, ভূগোল প্রভৃতি বিষয়ে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। কিন্তু তাঁর বিশেষ আকর্ষণ ছিল কুরআন মাজীদের প্রতি। তিনি নিজেই বলেছেন, তাঁর পিতা তাঁর উস্তাদকে কুরআন মাজীদ শিক্ষাদানের জন্য বিশেষ তাকীদ দিতেন।


পিতার মৃত্যুর পর তিনি ষোল বৎসর বয়সে অধ্যাপনার পৈতৃক দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন হতে মৃত্য অবধি তিনি অধ্যয়ন, অধ্যাপনা, রচনা ও সংকলন, তাবলীগ ও মুরীদগণের তালীম এবং শিষ্যদের সাধনা পরিচালনায় ব্যাপৃত থাকেন। আলিম সমাজ তাঁকে সিরাজুল হিন্দ উপাধী প্রদান করেন। তাঁর স্মৃতি শক্তি ছিল অতুলনীয়। অনেক বিখ্যাত পুস্তকাদির সুদীর্ঘ উদ্ধৃতি তিনি মুখস্ত লেখাতে পারতেন। বাতিনী ও রূহানী জগৎ বিষয়ক জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য পেশ করলে মনে হত যেন সমুদ্র উদ্বেলিত হচ্ছে। কথা বললে উপস্থিত লোকজন বিমুগ্ধ হয়ে যেত। আর তাদের অন্তর আল্লাহ প্রেমের নূরে উদ্ভাসিত হয়ে যেত। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এতই বাস্তবধর্মী যে, তিনি সৎ-নিয়তে ইংরেজী শিক্ষা করার ফতোয়া প্রদান করেন। তাঁর মৃত্যুর ৫০/৬০ বৎসর পরও অধিকাংশ আলিম এইরূপ স্থির মতামত প্রকাশে বিরত থাকেন।প্রতি সপ্তাহে মঙ্গল বার ও শুক্রবার শিক্ষানিকেতনে ওয়াজ করতেন। এতে অসংখ্য আগ্রহী শ্রোতা যোগদান করত। তাঁর বাচনভঙ্গি এতই চিত্তাকর্ষক ছিল যে, বিভিন্ন মাজহাব ও জাতির লোক তাঁর আলোচনায় তৃপ্ত হত। তাঁর কোন কথা কারো মনোকষ্টের কারণ হত না। প্রথম হতেই তাঁর আলোচনার রীতি ছিল খুবই পরিচ্ছন্ন এবং প্রাঞ্জল। কোন কঠিন বিষয়কে তিনি এমন সুন্দর ও সহজ ভাবে উপস্থাপন করতেন যে পণ্ডিত ব্যক্তিরাও আশ্চর্য হয়ে যেত। সমসাময়িক কালে তিনি ছিলেন আলেম-শায়েখদের কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর শিষ্যত্ব বড় বড় আলেমদেরও গর্বের বিষয় ছিল। তাঁর রচনাবলী পণ্ডিতদের কাছে প্রামাণ্য গ্রন্থরূপে বিবেচিত হয়।


মৃত্যু: রমজান ১২৩৯ হিঃ/ এপ্রিল ১৮২৪-এর শেষ দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থতা চেড়ে গেলে নগদ সমস্ত সম্পত্তি তিনি শরীয়ত মুতাবিক ভ্রাতুষ্পুত্র ও যাবিল-আরহামদের মাঝে বণ্টন করে দেন। তাঁর পরিহিত বস্ত্র দ্বারাই তাঁর কাফন দানের ওসিয়ত করে যান। ৭ই শাওয়াল ১২৩৯/৫ই জুন ১৮২৪ সালের রবিবার সকালে তাঁর ইন্তেকাল হয়। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বৎসরের কিছু বেশী। পর পর পঞ্চান্ন বার তাঁর জানাযার নামাজ আদায় করা হয়। দিল্লীর তুর্কি দরজার বাইরে পারিবারিক গোরস্থানে পিতার কবর বরাবর তাঁকে দাফন করা হয়।


উত্তরসূরী: তাঁর মাত্র তিন কন্যা ছিল। একজনের বিবাহ হয় ভ্রাতুষ্পুত্র ঈসার সঙ্গে, দ্বিতীয় জনের বিবাহ হয় অপর ভ্রাতুষ্পুত্র মাও আব্দুল হাই-এর সঙ্গে, তৃতীয় জনের স্ববংশীয় শাহ্ মুহাম্মাদ আফজালের সংগে। তৃতীয় কন্যার পুত্র শাহ্ মুহাম্মাদ ইসহাক ও শাহ্ মুহাম্মাদ ইয়াকুব তাঁর স্থলাভিষিক্ত ছিলেন। কিন্তু ১২৫৬ হিজরী তিনি ভারত হতে মক্কায় হিজরত করেন।


রচনাবলী: তাঁর রচনাবলী নিম্নে উল্লেখ করা হল- তাফসীরু ফাহি


আযিয, সাধারণতঃ তাফসীরে আযীযী নামে পরিচিত। তুফায়ে ইসনা আশারিয়া বুসতানুল মুহাদ্দিসীন (মুহাদ্দেসদের জীবনী গ্রন্থ) উজালা-ই- নাফেয়া (উসূলে হাদীস) সিদরুশ-শাহাদাতাইন (কারবালার ঘটনা) আযিযুল ইকতিবাস ফী ফাদায়েলে আখয়ারিন নাস (খুলাফায়ে রাশেদীনের ফজিলত সম্বলিত হাদীস ও ঐতিহাসিক বিবরণের সংকলন) মীযানুল আকাইদ ফাতাওয়ায়ে আযীযী (দুই খণ্ড) রসায়েলে খামসা (ফারসী ভাষায়) মালফুজাতে শাহ্ আব্দুল আযীয।


ওলী-আউলিয়া জীবনী পড়ুনঃ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url