মিঠা পানিতে বাগদা চিংড়ি চাষের নিয়ম ও পদ্ধতি।taqwa-dawah

 মিঠা পানিতে বাগদা চিংড়ি চাষের নিয়ম ও পদ্ধতি।

বাগদা চিংড়ি সাধারণত লবণাক্ত পানিতে চাষ করা হলেও আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে মিঠা পানিতে (ফ্রেশওয়াটার) চাষ সম্ভব। এটি সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে লাভজনকভাবে করা যায়।


মিঠা পানিতে বাগদা চিংড়ি চাষের নিয়ম ও পদ্ধতি।taqwa-dawah

১. উপযুক্ত জলাশয় নির্বাচন ও প্রস্তুতি
(ক) পুকুর বা ঘের নির্বাচন

জলাশয়টি ১০-১৫০ শতক হতে পারে।

গভীরতা ১-১.৫ মিটার উপযুক্ত।

পানি প্রবাহ ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন নিশ্চিত করতে হবে।

(খ) পুকুর প্রস্তুতি

পানি নিষ্কাশন ও শুকানো:

৫-৭ দিন পানি শুকিয়ে মাটি ফাটিয়ে নিন।

চুন প্রয়োগ:

প্রতি শতকে ১ কেজি চুন ছিটিয়ে নিন।

সার প্রয়োগ:

জৈব সার: প্রতি শতকে ২-৩ কেজি গোবর

রাসায়নিক সার: প্রতি শতকে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০০ গ্রাম টিএসপি

পানি দেওয়া:

প্রাকৃতিক খাদ্য (প্ল্যাঙ্কটন) উৎপাদনের জন্য ৭-১০ দিন পানি রেখে দিন


২. পানির গুণাগুণ নিয়ন্ত্রণ

পিএইচ: ৭.৫-৮.৫

অক্সিজেন: ৫-৭ পিপিএম

তাপমাত্রা: ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস

লবণাক্ততা: ২-৩ পিপিটি (বাগদার জন্য সামান্য লবণ প্রয়োজন)

লবণাক্ততা বাড়ানোর জন্য প্রতি ১০০০ লিটার পানিতে ৫-১০ গ্রাম লবণ মেশানো যেতে পারে।


৩. মানসম্মত পোনা সংগ্রহ ও ছাড়ার পদ্ধতি

(ক) মানসম্মত পোনা নির্বাচন

পোনা সাইজ: ১০-১২ মিমি

সুস্থ পোনা: স্বচ্ছ দেহ, দ্রুত সাঁতার কাটার ক্ষমতা

(খ) পোনা ছাড়ার পদ্ধতি (অ্যাক্লিমেটাইজেশন)

পোনা আস্তে আস্তে পানির সাথে খাপ খাওয়ানো জরুরি।

পোনার বস্তা বা ড্রাম ৩০-৪০ মিনিট পানিতে ভাসিয়ে রাখুন।

প্রতি ১০-১৫ মিনিট পর বস্তায় সামান্য পুকুরের পানি মেশান।

১ ঘণ্টা পরে ধীরে ধীরে পোনা ছেড়ে দিন।

(গ) পোনা মজুদের ঘনত্ব

প্রতি শতকে ২০-৩০ টি পোনা

হাই-ডেনসিটি চাষের ক্ষেত্রে ৪০-৫০ টি পোনা


৪. খাবার ও পুষ্টি ব্যবস্থাপনা

প্রথম ১৫ দিন আটোমিক ডাস্ট (শিশু খাদ্য) সরবরাহ করুন।

১৫ দিনের পর চিংড়ির প্রক্রিয়াজাত খাবার (৩৫-৪০% প্রোটিন) দিন।

খাদ্য সরবরাহের নিয়ম:

সকাল ও বিকেলে ২ বার খাওয়ান।

প্রথম মাস: পোনার ওজনের ৮-১০% খাবার

দ্বিতীয় মাস: ৬-৮%

তৃতীয় মাস থেকে: ৩-৫%


৫. পানি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা

প্রতি ১৫ দিনে ২০-৩০% পানি পরিবর্তন করুন।

বায়োফ্লক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে পানি পরিবর্তন কম করতে হয়।

নিয়মিত পুকুরের তলদেশ পরিষ্কার করুন


৬. রোগ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা

হোয়াইট স্পট ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন এড়াতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিন।

প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধক:

হলুদ, রসুন, নিমপাতার নির্যাস মিশিয়ে খাবার দিন।

পানি দূষিত হলে চিংড়ির স্বাস্থ্য খারাপ হবে, তাই অতিরিক্ত খাদ্য না দেওয়া ও নিয়মিত পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।


৭. সংগ্রহ ও বিপণন

৩.৫-৪ মাস পর বাজারজাত করা যায়।

ওজন: প্রতি চিংড়ি ২৫-৩০ গ্রাম হলে বিক্রি করা উত্তম।

বিক্রির আগে ২৪ ঘণ্টা না খাইয়ে রাখতে হবে, যাতে পেটে ময়লা না থাকে।


উপসংহার

মিঠা পানিতে বাগদা চাষ উন্নত প্রযুক্তি ও সঠিক ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করলে অত্যন্ত লাভজনক হতে পারে। নিয়মিত পানি ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সঠিক পোনা মজুদ, ওষুধবিহীন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং ভালো মানের খাবার ব্যবহার করলে সফলতা নিশ্চিত করা সম্ভব।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url