বাগদা চিংড়ির পোনা ঘেরে ছাড়ার সঠিক নিয়ম-taqwa-dawah

 বাগদা চিংড়ির পোনা ঘেরে ছাড়ার সঠিক নিয়ম।

সঠিক পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ির পোনা ছাড়লে এর বেঁচে থাকার হার (Survival Rate) বৃদ্ধি পায় এবং ভালো উৎপাদন নিশ্চিত হয়। তাই নিম্নলিখিত ধাপে ধাপে পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা জরুরি।

বাগদা চিংড়ির পোনা ঘেরে ছাড়ার সঠিক নিয়ম

১. ঘেরের সঠিক প্রস্তুতি
(ক) পানি ও পরিবেশ প্রস্তুতি

পোনা ছাড়ার আগে ঘেরের পানি ও পরিবেশ প্রস্তুত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পানির গভীরতা: ১.০ - ১.৫ মিটার হওয়া উচিত।

লবণাক্ততা: ৫-২৫ পিপিটি (ppt) হওয়া দরকার।

পিএইচ মাত্রা: ৭.৫ - ৮.৫

অক্সিজেন স্তর: ৫-৭ পিপিএম

জীবাণুমুক্তকরণ:

১০-১৫ দিন আগে চুন (CaCO₃) প্রয়োগ করুন (প্রতি শতকে ১ কেজি)।

কীটনাশক বা ক্ষতিকর প্রাণী দূর করতে সনাতন পদ্ধতি বা রাসায়নিক ব্যবহার করুন।

প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন:

ইউরিয়া, টিএসপি সার প্রয়োগ করুন এবং ৭-১০ দিন অপেক্ষা করুন, যাতে প্রাকৃতিক খাদ্য (প্ল্যাঙ্কটন) জন্মায়।


২. গুণগত মানসম্পন্ন পোনা নির্বাচন
স্বচ্ছ দেহ ও সক্রিয় সাঁতার কাটা পোনা নির্বাচন করুন।

১০-১২ মিমি আকারের পোনা বেছে নিন।

বিশ্বস্ত হ্যাচারি থেকে পোনা সংগ্রহ করুন।


৩. পোনা ছাড়ার পূর্বে ‘অ্যাক্লিমেটাইজেশন’ (পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো)

হঠাৎ করে পোনা ছাড়লে তাপমাত্রা ও লবণাক্ততার পার্থক্যের কারণে পোনা মারা যেতে পারে। তাই অ্যাক্লিমেটাইজেশন (পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো) জরুরি।

(ক) ধাপে ধাপে পোনা ছাড়ার পদ্ধতি:

পোনার বস্তা বা ড্রাম ঘেরে ৩০-৪০ মিনিট পানিতে ভাসিয়ে রাখুন।

এতে বস্তার পানি ও ঘেরের পানির তাপমাত্রা এক হয়ে যাবে।

প্রতি ১০-১৫ মিনিট পর বস্তার মধ্যে সামান্য ঘেরের পানি দিন।

এটি অন্তত ১ ঘণ্টা ধরে করুন, যাতে লবণাক্ততা ও তাপমাত্রা ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে পারে।

পোনা সরাসরি পানিতে ঢেলে না দিয়ে ধীরে ধীরে বের করে দিন।

ধাপে ধাপে নেট বা ঝাঁকা ব্যবহার করে পোনা ছেড়ে দিন।

সকাল বা বিকেলে (কম তাপমাত্রার সময়) পোনা ছাড়ুন।


৪. পোনা ছাড়ার ঘনত্ব নির্ধারণ

ঘেরের ধরন ও চাষ পদ্ধতির উপর নির্ভর করে পোনার পরিমাণ ঠিক করতে হবে।

স্বাভাবিক চাষ: প্রতি শতকে ২০-৩০ টি পোনা

আধা নিবিড় চাষ: প্রতি শতকে ৩০-৪০ টি পোনা

নিবিড় চাষ (ইন্টেনসিভ পদ্ধতি): প্রতি শতকে ৫০-৬০ টি পোনা


৫. পোনা ছাড়ার পর বিশেষ যত্ন

(ক) খাবার ও পুষ্টি নিশ্চিত করা

প্রথম ১৫ দিন আটোমিক ডাস্ট (শিশু খাদ্য) বা বিশেষ মাইক্রোফিড দিন।

১৫ দিনের পর প্রক্রিয়াজাত চিংড়ি খাদ্য (৩৫-৪০% প্রোটিনযুক্ত) দিন।

প্রথম ১ মাস: ওজনের ৮-১০% খাবার দিন

২ মাসের পর: ৬-৮%

(খ) পানির গুণমান রক্ষণাবেক্ষণ

প্রতি ১৫ দিনে ২০-৩০% পানি পরিবর্তন করুন

অক্সিজেন লেভেল ঠিক রাখতে এয়ারেটর বা প্যাডল হুইল ব্যবহার করুন

(গ) রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা

নিয়মিত চিংড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন

অ্যান্টিবায়োটিকের পরিবর্তে হলুদ, রসুন ও নিমপাতা মিশ্রিত খাবার দিন


উপসংহার

সঠিকভাবে পোনা নির্বাচন, অ্যাক্লিমেটাইজেশন ও পরিচর্যা করলে বাগদা চিংড়ির উৎপাদন ও মুনাফা বৃদ্ধি পাবে। নিয়মিত পানির গুণগত মান পরীক্ষা, প্রাকৃতিক খাদ্য নিশ্চিত করা ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url