মৎস্য ঘেরে বাগদা চিংড়ির পোনা ছাড়ার সঠিক পদ্ধতি।taqwa-dawah

 মৎস্য ঘেরে বাগদা চিংড়ির পোনা ছাড়ার সঠিক পদ্ধতি।

বাগদা চিংড়ির সফল চাষের জন্য ভালো মানের পোনা নির্বাচন ও সঠিকভাবে ঘেরে ছাড়ার পদ্ধতি অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। নিচে ধাপে ধাপে বাগদা চিংড়ির পোনা ছাড়ার পদ্ধতি দেওয়া হলো:

মৎস্য ঘেরে বাগদা চিংড়ির পোনা ছাড়ার সঠিক পদ্ধতি।taqwa-dawah


১. ঘের প্রস্তুতি

(ক) পানির গুণাগুণ পরীক্ষা ও প্রস্তুতি

পানির লবণাক্ততা: ৫-২৫ পিপিটি (ppt) উপযুক্ত।

পানির পিএইচ: ৭.৫-৮.৫ এর মধ্যে থাকতে হবে।

জলজ আগাছা ও ক্ষতিকর প্রাণী অপসারণ:

কীটনাশক বা চুন প্রয়োগ করে ক্ষতিকর প্রাণী ও আগাছা দূর করুন।

জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগ:

প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য ইউরিয়া, টিএসপি ও গোবর সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।

জলাশয়ের গভীরতা: ১-১.৫ মিটার হওয়া উচিত।


২. মানসম্মত বাগদা চিংড়ির পোনা নির্বাচন

পোনা উৎস: নির্ভরযোগ্য হ্যাচারি থেকে সংগ্রহ করা ভালো।

পোনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা:

সক্রিয়ভাবে সাঁতার কাটে কি না পরীক্ষা করুন।

শরীরের রঙ স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল হলে ভালো মানের পোনা।

দুর্বল বা রোগাক্রান্ত পোনা পরিহার করুন।


৩. পোনার ঘেরে ছাড়ার প্রস্তুতি
(ক) পোনা অ্যাক্লিমেটাইজেশন (পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো)

পোনার হ্যাচারির পানির তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা ঘেরের পানির সাথে হঠাৎ পরিবর্তন হলে পোনা মারা যেতে পারে। তাই ধাপে ধাপে খাপ খাওয়াতে হবে।

ধাপ ১: পোনার বস্তা বা ড্রাম ঘেরের পানিতে ৩০-৪০ মিনিট ভাসিয়ে রাখুন, যাতে পানির তাপমাত্রা সমান হয়।

ধাপ ২: প্রতি ১০-১৫ মিনিট পর বস্তার মধ্যে সামান্য ঘেরের পানি মিশিয়ে দিন।

ধাপ ৩: এক ঘণ্টা পরে ধীরে ধীরে পোনা পানিতে ছেড়ে দিন।


৪. পোনা মজুদের ঘনত্ব

সাধারণত ৮,০০০ - ১২,০০০ পোনা/হেক্টর ঘনত্বে চাষ করা হয়।

ঘেরের গভীরতা, পানির গুণাগুণ ও চাষ কৌশলের ওপর ভিত্তি করে ঘনত্ব নির্ধারণ করুন।


৫. পোনা ছাড়ার সঠিক সময়

সাধারণত সকাল বা বিকেলে পোনা ছাড়াই ভালো, কারণ এ সময় তাপমাত্রা কম থাকে।

বৃষ্টি বা প্রচণ্ড রোদে পোনা না ছাড়া উত্তম।


৬. পোনা ছাড়ার পর বিশেষ যত্ন

প্রাকৃতিক খাবার নিশ্চিত করুন: ঘেরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাবার (প্লাংকটন) থাকলে পোনার বেঁচে থাকার হার বাড়বে।

পর্যাপ্ত অক্সিজেন নিশ্চিত করুন: প্রয়োজনে পানিতে এয়ারেটর বা প্যাডল হুইল ব্যবহার করুন।

নিয়মিত পানি পরীক্ষা করুন:

পিএইচ, অক্সিজেন, অ্যামোনিয়া, লবণাক্ততা পর্যবেক্ষণ করুন।

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিন:

নিয়মিত চেক করুন এবং অ্যান্টিবায়োটিকের পরিবর্তে প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধক ব্যবহার করুন।


উপসংহার

সঠিকভাবে পোনা নির্বাচন, অ্যাক্লিমেটাইজেশন ও পরিচর্যা করলে বাগদা চিংড়ি চাষ লাভজনক হতে পারে। নিয়মিত তদারকি ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে উৎপাদনশীলতা আরও বাড়বে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url