ড্রাগন ফল চাষের পদ্ধতি ও পরিচর্যা-taqwa-dawah


ড্রাগন ফল চাষের পদ্ধতি ও পরিচর্যা।


ড্রাগন ফল (Dragon Fruit) বর্তমানে একটি লাভজনক ও জনপ্রিয় চাষ। এটি মূলত ক্যাকটাস জাতীয় গাছ, যার উৎপত্তি মেক্সিকো, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা। বাংলাদেশে এর চাষ দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে, কারণ এটি অল্প জায়গায়, কম পানিতে ও সহজ পরিচর্যায় ভালো উৎপাদন দেয়


ড্রাগন ফল চাষের পদ্ধতি ও পরিচর্যা-taqwa-dawah


১. ড্রাগন ফল চাষের উপযুক্ত পরিবেশ

আবহাওয়া: উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু (২৫-৩৫°C)।

মাটি: দোআঁশ বা বেলে-দোআঁশ মাটি, যার পিএইচ ৬-৭

বৃষ্টি: ৩০০-৪০০ মিমি বৃষ্টি প্রয়োজন।

সূর্যালোক: পর্যাপ্ত রোদ থাকা দরকার (প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৮ ঘণ্টা)।


২. ড্রাগন ফল চাষের ধাপ

(ক) জমি নির্বাচন ও প্রস্তুতি

উঁচু ও জলাবদ্ধতাহীন জমি নির্বাচন করুন।

জমি চাষ করে মাটি নরম করুন।

পিট (গর্ত) তৈরি করুন:

প্রতিটি গাছের জন্য ২.৫ ফুট × ২.৫ ফুট × ২.৫ ফুট গর্ত করুন।

গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৮-১০ ফুট এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ১০-১২ ফুট রাখুন।

মাটির সাথে সার মিশিয়ে গর্ত ভরাট করুন:

কম্পোস্ট বা গোবর সার – ৫-৭ কেজি

টিএসপি সার – ২০০ গ্রাম

এমওপি সার – ১০০ গ্রাম

চুন (যদি পিএইচ কম থাকে) – ১০০-২০০ গ্রাম


(খ) ড্রাগন ফলের চারা রোপণ

চারা বা কাটিং সংগ্রহ:

ভালো জাতের চারা বা কাটিং সংগ্রহ করুন।

কাটিংয়ের দৈর্ঘ্য ২৫-৩০ সেন্টিমিটার হলে ভালো হয়।

রোপণের সময়:

গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) চারা রোপণ উপযুক্ত।

রোপণের নিয়ম:

প্রতি গর্তে ১-৪ টি কাটিং লাগানো যায়।

কাটিং মাটির ২-৩ ইঞ্চি ভেতরে বসিয়ে দিন।

চারার পাশে বাঁশ বা কংক্রিটের খুঁটি দিন, যাতে গাছ ঠিকমতো বেড়ে উঠতে পারে।


(গ) সার ব্যবস্থাপনা

প্রতি বছর গাছের গোড়ায় নিম্নোক্ত সার প্রয়োগ করুন:

গোবর বা কম্পোস্ট – ৫-১০ কেজি

ইউরিয়া – ২০০-৩০০ গ্রাম

টিএসপি – ২০০-২৫০ গ্রাম

এমওপি – ২০০-৩০০ গ্রাম

সার প্রয়োগের নিয়ম:

বর্ষার শুরুতে ও শীতের শেষে সার দিন।

সার দেওয়ার পর গাছের গোড়ায় মাটি কুপিয়ে দিন।


(ঘ) পানি সেচ ও আগাছা দমন

ড্রিপ ইরিগেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা ভালো।

শুকনো মৌসুমে ৭-১০ দিন পরপর পানি দিন।

বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি জমতে দেবেন না।

নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করুন।


(ঙ) মাচা ও খুঁটি তৈরি

ড্রাগন ফল গাছের জন্য মাচা বা খুঁটি (Trellis System) দরকার

কংক্রিটের খুঁটি (৬-৭ ফুট লম্বা) সবচেয়ে ভালো।

খুঁটির উপরে লোহার রিং বা প্লাস্টিকের জাল ব্যবহার করা যায়।


৩. ড্রাগন ফলের পরিচর্যা

(ক) গাছ ছাঁটাই ও ডাল পরিষ্কার

গাছের অপ্রয়োজনীয় ও রোগাক্রান্ত ডাল কেটে ফেলুন

বেশি ডাল থাকলে ফলন কমে যায়, তাই ৪-৫টি প্রধান ডাল রেখে বাকিগুলো ছেঁটে দিন।

(খ) রোগ ও পোকামাকড় দমন

রোগ:

স্টেম রোট (কাণ্ড পচা) – কপার অক্সিক্লোরাইড (২ গ্রাম/লিটার পানি) স্প্রে করুন।

ফাঙ্গাস আক্রমণ – বোর্দো মিশ্রণ বা ফাঙ্গিসাইড স্প্রে করুন।

পোকামাকড়:

এফিড ও মিলিবাগ: নিম তেল বা কীটনাশক স্প্রে করুন।

পিঁপড়া ও উইপোকা: চুন বা ফিপ্রোনিল প্রয়োগ করুন।


৪. ফুল ও ফল আসার সময়

ড্রাগন গাছে ফুল আসে ১.৫-২ বছর পর।

মে-জুন মাসে ফুল ফোটে এবং আগস্ট-নভেম্বরে ফল সংগ্রহ করা যায়।

ফল গাছে ৩০-৪০ দিন পরিপক্ক হতে সময় লাগে।

ফুল ফোটার সময় হাত দিয়ে পরাগায়ন (Hand Pollination) করলে ফলন বেশি হয়।


৫. ড্রাগন ফল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ

ফল লাল বা গোলাপি হলে এটি সংগ্রহের উপযুক্ত।

সকাল বা বিকেলে ফল সংগ্রহ করুন।

সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে ২-৩ সপ্তাহ ভালো থাকে।


৬. ড্রাগন ফল চাষের লাভজনক দিক

প্রতি বিঘায় ৩০-৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ২-৩ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব

একবার চারা লাগালে ১৫-২০ বছর ফলন পাওয়া যায়

কম পরিচর্যায় উচ্চমূল্যের বাজার পাওয়া যায়


উপসংহার

ড্রাগন ফল চাষ নতুন কৃষি উদ্যোগ হিসেবে অত্যন্ত লাভজনক। এটি কম পরিশ্রমে, দীর্ঘমেয়াদি ও উচ্চ ফলনের ফসল। সঠিক পরিচর্যা ও পদ্ধতি অনুসরণ করলে উচ্চ উৎপাদন ও ভালো মুনাফা পাওয়া সম্ভব।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url