শবে বরাতে বিশেষ আমল।taqwa-dawa

 শবে বরাতে বিশেষ আমল।

শবে বরাতকে ইসলামী ঐতিহ্যে বিশেষ একটা মর্যাদাপূর্ণ রাত হিসেবে বিবেচনা করা হয় – এ রাতকে "মুক্তির রাত" বা "ভাগ্যের রাত" বলা হয়। যদিও এই রাতের বিশেষ কোনো নামাজ বা নির্দিষ্ট আমলের কোন বাধ্যতামূলক নির্দেশনা (ফরজ) সুস্পষ্টভাবে হাদিসে পাওয়া যায় না, তথাপি বহু আলেম ও ফকীহের মতে, এই রাতটি অতিরিক্ত নফল ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে অতিবাহিত করা উত্তম।

নিম্নে শবে বরাতে করণীয় কিছু আমলের পরিপ্রেক্ষিতে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:


১. অতিরিক্ত নফল নামাজ

  • দীর্ঘ কিরাতে নামাজ:
    হাদিসে বর্ণিত আছে যে, নবী করিম (সা.) শবে বরাতের রাত দীর্ঘ সিজদা ও নফল নামাজ আদায় করতেন। এভাবে নামাজের রুকু-সিজদায় সময় বাড়িয়ে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট বিশেষ করুণা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা যেতে পারে।

২. কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির

  • তেলাওয়াত:
    এই রাতে কোরআনের পাঠ ও তেলাওয়াত করে নিজেকে আল্লাহর হুকুম ও আশীর্বাদে নিমগ্ন করা উত্তম।
  • তাসবিহ-তাহলীল:
    “সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার” ইত্যাদি উচ্চারণ করে জিকির করা, যা মনকে শান্ত ও আল্লাহর নিকট নিবেদিত রাখে।

৩. দোয়া ও ইস্তিগফার

  • ক্ষমা প্রার্থনা:
    শবে বরাতে আল্লাহতায়ালা বান্দাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন ও ক্ষমা করেন – এ রাতে বেশি বেশি তওবা, ইস্তিগফার (পাপ মাফ করার জন্য প্রার্থনা) করা উচিত।
  • বিশেষ দোয়া:
    আপনি আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহ মাফ করার, রিযিক বাড়ানোর এবং বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে পারেন। যেমন:

    “রাব্বি, আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আপনার নিকট আমার পাপগুলো মাফ করুন…”


৪. সালাওয়াত ও দুরুদ পাঠ

  • নবীর প্রতি দরুদ:
    শবে বরাতে নবী করিম (সা.) এর প্রতি বেশি বেশি সালাওয়াত (বন্দাদের জন্য বরকত ও প্রেম প্রকাশ) পাঠ করা যেতে পারে। এতে আপনার ঈমান ও নবীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পায়।

৫. আত্মনিরীক্ষা ও অন্তরের শুদ্ধতা

  • তওবা ও আত্মসমীক্ষা:
    এই পবিত্র রাতে নিজের গুনাহের কথা স্মরণ করে আন্তরিকভাবে তওবা করা, নিজেকে সংশোধনের সংকল্প গ্রহণ করা এবং পরবর্তীতে সঠিক পথে চলার অঙ্গীকার করা উচিত।
  • আত্মবিশ্লেষণ:
    নিজের জীবনের ভুল ও অনিষ্টগুলো চিনে, সেগুলো থেকে ফিরে আসার চেষ্টা করুন।

৬. ঐচ্ছিক অন্যান্য আমল

  • কবরজিয়ারত:
    যদি সম্ভব হয়, কবরস্থানে গিয়ে মৃত আত্মীয়দের জন্য দোয়া করা ও তাদের জন্য মাগফিরাত প্রার্থনা করা কিছু গ্রুপ ও আলেমের মতে বরকতময় আমল।
  • রোজা:
    কিছু ইসলামি স্কলার বলেও থাকেন, শবে বরাতের পরের দিন (বা সেই মাসের বিশেষ রোজা) রাখতে পারেন—but এই বিষয়ে মতভেদ রয়েছে, তাই যদি আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা রাখতে চান, তা করতে পারেন; তবে এটা ফরজ নয়।

মনোযোগের বিষয়:

  • নির্বাচিত আমল:
    শবে বরাতে বিশেষ কোনো নির্দিষ্ট নামাজ বা নতুন পদ্ধতি তৈরির প্রস্তাব (যেমন, বিশেষ “শবে বরাত নামাজ”) কোনো সুস্পষ্ট সহীহ হাদিসে পাওয়া যায় না। বরং রাসূল (সা.) যেভাবে অতিরিক্ত নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির ও দোয়া আদায় করতেন, সেই নিয়ম অনুসরণ করা উত্তম।
  • অপ্রয়োজনীয় বিদআত থেকে বিরত থাকুন:
    কিছু সমাজে অতিরিক্ত বা নতুন আমলের প্রচলন হয়েছে, যা হাদিস ও সুন্নাহর ভিত্তিতে নেই। তাই মূলসূত্র হিসেবে কোরআন ও সুন্নাহ গ্রহণ করে ইবাদত করুন।

উপসংহার

শবে বরাতকে একে মানব জীবনের নৈতিকতা, ক্ষমাপ্রার্থনা ও আধ্যাত্মিক নবজীবনের এক সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করুন। এই রাতে যতই ইবাদত করবেন, ততই আল্লাহ আপনার পাপ মাফ করবেন, রিযিক বাড়াবেন এবং আপনাকে শান্তি ও রহমতের আশীর্বাদ দেবেন – এটাই আমাদের আশীর্বাদপ্রাপ্তির পথ।

আল্লাহ আমাদের সকলকে এই পবিত্র রাতে সঠিকভাবে ইবাদত করার তাওফিক ও তৌফিক দান করুন। আমিন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url