সপ্নে ডিম দেখলে কি হয়? সপ্নে ডিম দেখার ব্যাখ্যা কি? ইসলামের দৃষ্টিতে সপ্নে ডিম দেখার ব্যাখ্যা।taqwa-dawah
সপ্নে ডিম দেখলে কি হয়? সপ্নে ডিম দেখার ব্যাখ্যা কি?
ইসলামের দৃষ্টিতে সপ্নে ডিম দেখার ব্যাখ্যা।
ডিম দেখা: স্বপ্নে দেখা ডিম যদি অজ্ঞাত-অপরিচিত হয়, তাহলে অর্থ হবে।
সুশ্রী, লাবণ্যময়ী নারী। কিন্তু এর জন্য শর্ত হল- দর্শনকারী ডিমের মালিক হওয়া কিংবা সেটি তার নিকট আসা অনিবার্য। কেউ যদি ভুনা করা, সিদ্ধ অথবা রান্না করা ডিম খেয়েছে মর্মে দেখতে পায়, তাহলে এটা তার ধন-দৌলত ও কল্যাণময় উত্তম রিযিকপ্রাপ্তির আলামত। পক্ষান্তরে কাঁচা ডিম খেয়েছে মর্মে স্বপ্ন দেখার ব্যাখ্যা অবৈধ ও হারাম মাল দ্বারা করা হয়। কেউ যদি ডিমের খোসা কিংবা কুসুম ব্যতীত কেবল সাদা অংশটুকু খেয়েছে দেখতে পায়, তাহলে ব্যাখ্যা হবে- সে কোন মৃত কিংবা নিহত ব্যক্তির মাল আত্মসাৎ করবে। এমনকি সম্ভবত সে ব্যক্তি কাফন চোরও হতে পারে।
এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কয়েকটি ঘটনা:
ঘটনা: (ক) বর্ণিত আছে- এক ব্যক্তি ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সীরীন (রহঃ)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে আরয করল:
হুযূর! স্বপ্নে আমি মদীনা মসজিদের গম্বুজের উপর একটি সাদা কবুতর দেখতে পেয়েছি। যার সৌন্দর্য দেখে আমি বিস্মিত ও অভিভূত হয়ে পড়েছি। অতঃপর দেখি কি-সহসা একটি শিকারী পাখী এসে ছোঁ মেরে কবুতরটিকে তুলে নিয়ে গেল।
বৃত্তান্ত শুনে ইবনে সীরীন বললেন: তোমার স্বপ্ন যদি সত্য হয়, তাহলে অচিরেই আবদুল্লাহ্ ইবনে জা'ফর তাইয়ারের কন্যার সাথে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের বিয়ে সম্পাদিত হবে।
সুতরাং বাস্তবে তাঁর ব্যাখ্যাই সত্যে প্রমাণিত হল। অল্প ক'দিন পরই হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ আবদুল্লাহর কন্যাকে বিয়ে করে নেয়। এ ঘটনার পর মুহাম্মদ ইবনে সীরীনকে লোকেরা জিজ্ঞেস করল:
হে আবু আবদুল্লাহ্! আপনার এব্যাখ্যা কিসের ভিত্তিতে এবং কি করে আপনি জানতে পারলেন?
উত্তরে তিনি বললেন: কপোতীর ব্যাখ্যা নারী, চমক অর্থ নারীর রূপ-লাবণ্য। আর মসজিদের গম্বুজ অর্থ- সে নারীর বংশ-মর্যাদা। কাজেই রূপের ভুবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে জা'ফর কন্যা অপেক্ষা অধিক রূপবতী আর বংশ গৌরবে তার তুলনায় উচ্চ বংশীয়া কোন মেয়ে গোটা মদীনায় আর কেউ নেই। আর শিকারী বাজপাখীর বিষয়টি চিন্তা করার ফলে আমার প্রবল ধারণা হল-এর অর্থ অত্যাচারী যালিম শাসক। এক্ষেত্রে হাজ্জাজ অপেক্ষা অত্যাচারী শাসক আমি দ্বিতীয় কাউকে দেখিনি। সুতরাং ব্যাখ্যা পরিষ্কার। তাঁর এহেন বাস্তবধর্মী বিশ্লেষণ শুনে দরবারে উপস্থিত লোকেরা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়ে।
ঘটনা: (খ) বর্ণিত আছে- অপর এক ব্যক্তি ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সীরীনের নিকট উপস্থিত হয়ে আরয করলঃ
হুযূর! স্বপ্নে দেখলাম। একটি হৃষ্টপুষ্ট, মোটাতাজা পাখী আকাশ থেকে নেমে আসল। একটি গাছের ডালে বসে ঠোকর দিয়ে কয়েকটি ফুল নিয়ে সেটি পুনরায় আকাশে উড়ে গেল। কিন্তু আমি বলতে পারি না পাখীটি কোন্ জাতের ছিল।
ঘটনা শুনে ইমাম সাহেবের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেন: এর ব্যাখ্যায় বুঝা যায়- বেশ কিছু আলেমের মৃত্যু আসন্ন।
উল্লেখ্য, সে বছরই হযরত হাসান বসরী (রহঃ) এবং মুহাম্মদ ইবনে সীরীন (রহঃ) ইন্তেকাল করেন।
ঘটনাঃ (গ) বর্ণিত আছে- আমীরুল মু'মিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন: অন্যরা যেমন দেখে আমিও তদ্রুপ স্বপ্ন দেখেছি, একটি মোরগ এসে আমাকে যেন একবার অথবা দুইবার ঠোকর মেরেছে।
লোকেরা প্রশ্ন করল: হুযূর! এর ব্যাখ্যা কি হতে পারে?
ইসলামের দৃষ্টিতে সপ্নে ডিম দেখার ব্যাখ্যা।
উত্তরে তিনি বললেন: জনৈক আজমী তথা অনারব ব্যক্তি আমাকে হত্যা করবে। সুতরাং এরপর চারদিন গত হওয়ার আগেই আবু লু'লু নামক জনৈক গোলাম তাঁকে ফজরের নামাযে ইমামতি করা অবস্থায় বিষাক্ত তরবারির আঘাতে শহীদ করে।
ঘটনাঃ (ঘ) এক ব্যক্তি ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সীরীন (রহঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করল:
হুযূর! একজন স্বপ্ন দেখেছে ডিম ভেঙ্গে কুসুম বাদ দিয়ে সে কেবল সাদা অংশটুকু তুলে নিচ্ছে। এর ব্যাখ্যা কি হবে?
তিনি বললেন: তাকে বল-নিজে উপস্থিত হয়ে যেন সে তার স্বপ্নের বৃত্তান্ত বর্ণনা করে।
লোকটি বলল: তার পক্ষ থেকে আমি হাজির আছি। আপনার দেয়া ব্যাখ্যা আমি তাকে গিয়ে শুনিয়ে দেব।
ইমাম সাহেব বললেন: না, তা হতে পারে না, স্বয়ং তাকেই আসতে হবে। লোকটি একই কথা বারবার বলতে থাকে আর ইমাম সাহেবেরও একই জবাব-না, তাকেই আসতে হবে। অবশেষে লোকটি স্বীকার করতে বাধ্য হয়, এস্বপ্ন তারই দেখা।
ইমাম সাহেব বললেন: বেশ, তাহলে আমার সামনে কসম খেয়ে বল-এস্বপ্ন তুমিই দেখেছ। লোকটি কসম খেয়ে বলল, হাঁ, এটি আমারই দেখা স্বপ্ন। উপস্থিত লোকদের লক্ষ্য করে ইমাম সাহেব বললেন: একে ধরে সুলতানের কাছে নিয়ে যাও এবং তাঁকে বল এ লোকটি কবর খুঁড়ে মুর্দার কাফন চুরি করে নিয়ে যায়।
লোকটি এবার অনুনয়ের সুরে আবেদন করতে শুরু করে- হুযূর! আপনার হাতে হাত রেখে আল্লাহর দরবারে এই মুহূর্তে তওবা করছি- জীবনে কখনো আর একাজ করবো না।
ঘটনাঃ (ঙ) বর্ণিত আছে- অপর এক ব্যক্তি ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সীরীন (রহঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করল:
হুযূর! স্বপ্নে আমি দেখতে পাই একটি রাজহাঁস ধরে সেটি যবাহ করতে উদ্যত হয়েছি। যখনি তার গলায় আমি ছুরি চালাতে চাই, সে ঘুরে যায়। এরকম তিন বার হয়েছে। চতুর্থবারে আমি যবাহ করতে সক্ষম হই।
ইমাম সাহেব বললেন: এর ব্যাখ্যা হল, তুমি তোমার কুমারী স্ত্রীর সাথে সহবাসের চেষ্টা করে তিনবার ব্যর্থ হয়েছ। অতঃপর চতুর্থবারে তুমি উদ্দেশ্য পূরণে সক্ষম হয়েছ।
লোকটি বলল: হুযূর, আপনি ঠিকই বলেছেন। গত পাঁচ রাত ধরে একই অবস্থা চলে আসছে।