মৃত ব্যাক্তি পক্ষ থেকে সাদকাহ করা এবং তার জন্য দু'আ করা যাবে?

 মৃতের পক্ষ থেকে সাদকাহ করা এবং তার জন্য দু'আ করা যাবে?



মৃতের পক্ষ থেকে সাদকাহ করা এবং তার জন্য দু'আ করা যাবে?


মহান আল্লাহ বলেন,

অর্থাৎ, যারা তাদের পর আগমন করে তারা বলে, 'হে আমাদের প্রতিপালক ! আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রগামী আমাদের ভ্রাতৃগণকে ক্ষমা ক'রে দেন।' (সূরা হাশর ১০)



(১৩৮৬) আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী কে বলল, 'আমার মা হঠাৎ মারা গেছে। আমার ধারণা যে, সে কথা বলার সুযোগ পেলে সাদকাহ করত। সুতরাং আমি যদি তার পক্ষ থেকে সাদকাহ করি, তাহলে কি সে নেকী পাবে ?' তিনি বললেন, "হ্যাঁ।" (বুখারী ১৩৮৮, ২৭৬০, মুসলিম ২৩৭৩, ৪৩০৭-৪৩০৮)



(১৩৮৭) ইবনে আব্বাস বলেন, সা'দ বিন উবাদাহর মা যখন ইন্তেকাল করেন, তখন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি আল্লাহর রসূলকে বললেন, 'হে আল্লাহর রসূল! আমার অনুপস্থিত থাকা কালে আমার আম্মা মারা গেছেন। এখন যদি তাঁর পক্ষ থেকে কিছু দান করি তাহলে তিনি উপকৃত হবেন কি ?' নবী বললেন, "হ্যাঁ হবে।" সা'দ বললেন, 'তাহলে আমি আপনাকে সাক্ষ্য রেখে বলছি যে, আমার মিখরাফের বাগান তাঁর নামে সদকাহ করলাম।' (বুখারী ২৭৫৬, ২৭৬২ প্রমুখ)



(১৩৮৮) আবূ হুরাইরাল হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, "যখন কোন মানুষ মারা যায়, তখন তার কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি জিনিস নয় (১) সাদকা জারিয়াহ, (২) যে বিদ্যা দ্বারা উপকার পাওয়া যায় অথবা (৩) সৎ সন্তান যে তার জন্য দু'আ করে।" (মুসলিম ৪৩১০, আবু দাউদ ২৮৮০, নাসাঈ ৩৬৫৩ প্রমুখ)



(১৩৮৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, "নিশ্চয় আল্লাহ আয্যা অজাল্ল জান্নাতে নেক বান্দার দর্জা উঁচু করেন। সে তখন বলে, 'হে আমার প্রতিপালক! এ উন্নতি কীভাবে ?' আল্লাহ বলেন, 'তোমার জন্য তোমার ছেলের ক্ষমা প্রার্থনার ফলে।" (আহমাদ ১০৬১০) 



(১৩৯০) ইবনে আব্বাস বলেন, 'এক মহিলা সমুদ্র-সফরে বের হলে সে নযর মানল যে, যদি আল্লাহ তাবারাকা অতাআলা তাকে সমুদ্র থেকে পরিত্রাণ দান করেন, তাহলে সে একমাস সিয়াম রাখবে। অতঃপর সে সমুদ্র থেকে পরিত্রাণ পেয়ে ফিরে এল। কিন্তু সিয়াম না রেখেই সে মারা গেল। তার এক কন্যা নবী এর নিকট এসে সে ঘটনার উল্লেখ করলে তিনি বললেন, "মনে কর, তার যদি কোন ঋণ বাকী থাকত, তাহলে তা তুমি পরিশোধ করতে কি না ?" বলল, 'হ্যাঁ।' তিনি বললেন, "তাহলে আল্লাহর ঋণ অধিকরূপে পরিশোধ-যোগ্য। সুতরাং তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে সিয়াম কাযা করে দাও।" (আহমাদ ১৮৬১, ৩১৩৮, আবু দাউদ ৩৩১০, তাবারানী ১২১৯৫, প্রমুখ)




(১৩৯১) ইবনে আব্বাস বলেন, এক ব্যক্তি নবী এর নিকট এসে বলল, 'আমার বোন হজ্জ করার নযর মেনে মারা গেছে। (এখন কি করা যায় ? ) নবী বললেন, "তার ঋণ বাকী থাকলে কি তুমি পরিশোধ করতে? লোকটি বলল, 'হ্যাঁ।' তিনি বললেন, "তাহলে আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করে দাও। কারণ, তা অধিক পরিশোধ-যোগ্য।" (বুখারী ৬৬৯১)





(১৩৯২) ইবনে আব্বাস বলেন, 'কোন ব্যক্তি রমযান মাসে অসুস্থ হয়ে পড়লে এবং তারপর সিয়াম না রাখা অবস্থায় মারা গেলে তার পক্ষ থেকে মিসকীন খাওয়াতে হবে; তার কাযা নেই। পক্ষান্তরে নযরের সিয়াম বাকী রেখে মারা গেলে তার পক্ষ থেকে তার অভিভাবক (বা ওয়ারেস) সিয়াম রাখবে।' (আবূ দাউদ ২৪০৩ প্রমুখ)




(১৩৯৩) আব্দুল্লাহ বিন আম্ম বলেন, আস বিন ওয়াইল সাহমী তার পক্ষ হতে ১০০টি ক্রীতদাস মুক্ত করার অসিয়ত করে মারা যায়। সুতরাং তার ছোট ছেলে হিশাম ৫০টি দাস মুক্ত করে। অতঃপর তার বড় ছেলে আমর বাকী ৫০টি দাস মুক্ত করার ইচ্ছা করলে বললেন, '(বাপ তো কাফের অবস্থায় মারা গেছে) তাই আমি এ কাজ আল্লাহর রসূল কে জিজ্ঞাসা না করে করব না।' সুতরাং তিনি নবী এর নিকট এসে ঘটনা খুলে বলে জিজ্ঞাসা করলেন, "আমি কি বাকী ৫০টি দাস তার পক্ষ থেকে মুক্ত করব ?' উত্তরে আল্লাহর রসূল বললেন, "সে যদি মুসলিম হতো এবং তোমরা তার পক্ষ থেকে দাস মুক্ত করতে, অথবা সদকাহ করতে অথবা হজ্জ করতে তাহলে তার সওয়াব তার নিকট পৌঁছত।" (আবূ দাউদ ২৮৮৫, বাইহাকী ৬/২৭৯, আহমাদ ৬৭০৪)




(১৩৯৪) আবু হুরাইরা কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল বলেছেন, "মুমিনের মৃত্যুর পর তার আমল ও পুণ্যকর্মসমূহ হতে নিশ্চিতভাবে যা এসে তার সাথে মিলিত হয় তা হল; সেই ইল্ম, যা সে শিক্ষা করে প্রচার করেছে অথবা নেক সন্তান যাকে রেখে সে মারা গেছে, অথবা কুরআন শরীফ যা সে মীরাসরূপে ছেড়ে গেছে, অথবা মসজিদ যা সে নিজে নির্মাণ করে গেছে, অথবা মুসাফিরখানা যা সে মুসাফিরদের সুবিধার্থে নির্মাণ করে গেছে, অথবা পানির নালা যা সে (সেচ ইত্যাদির উদ্দেশ্যে) প্রবাহিত করে গেছে, অথবা সাদকাহ যা সে নিজের মাল থেকে তার সুস্থ ও জীবিতাবস্থায় বের (দান) করে গেছে এসব কর্মের সওয়াব তার মৃত্যুর পরও তার সাথে এসে মিলিত হবে।" (ইবনে মাজাহ ২৪২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৩৪৪৮, ইবনে খুযাইমাহ ২৪৯০ ভিন্ন শব্দে, সহীহ তারগীব ১০৭)


আরও পড়ুনঃ



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url